শ্রেয়সী

আমার বাবা (জুন ২০১৫)

Farhad Reza
  • 0
  • ৪৮
" নিজের হাতে পরিপাটি যত্নে সাজানো ফুলবাগানের

সাথে লাগোয়া বারান্দায় ইজি চেয়ারে মুদ্রিত চোখে

বসে দুলছেন শুভ্র সুন্দর চেহারার মাঝবয়সী ভদ্রলোক

আরিফ সাহেব যিনি আমার জন্মদাতা পিতাই শুধু নন,

একাধারে আমার একাকিত্ব জীবনের বিশ্বস্ত সঙ্গী,


ভবিষ্যতের বন্দুর পথে হাতে হাত রেখে বিশ্বস্ততার

সাথে এগিয়ে চলার একমাত্র অনুপ্রেরণা, আমার

দিশাহীন পথের আলোকবর্তিকা এবং সর্বপরি আমার

জীবনের অন্যতম আদর্শ যাকে আড়াল করে আমি

শ্রেয়সী সমাজে মাথা উঁচু করে জোর গলায় বলতে

পারছি, হ্যা, আমি-ই শ্রেয়সী রহমান নিষ্ঠাবান কাজী

আরিফ রহমান সাহেবের একমাত্র কন্যা যিনি

আজীবন তার মতাদর্শের কাছে ছিলেন অবিচল,

নীতির ব্যাপারে ছিলেন আপসহীন অক্লান্ত এক জীবন

যোদ্ধা যাকে ভালবাসতে পারাটাই বোধকরি সর্বসুখ.

আমার বাবা নিভৃতচারী ভদ্রজনটি কখনই আমাকে

ক্ষনিকের তরেও বুঝতে দেননি মা হারানোর বেদনা কি

জিনিস! আমার মা আমার জন্মের চার মাসের মাথায়

লিউকেমিয়া নামক রক্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে বাবার

কাছে আমাকে সঁপে দিয়ে ইহধাম ত্যাগ করেন সেই

থেকে আজ অবধি বাবা শুধু আমার কাছে বাবাই নন

যুগপৎ আমার স্নেহময়ী মা-ও, শৈশবেই বাবার কাছে

শুনা আমি নাকি অবিকল মায়ের চেহারা নিয়ে এ

পৃথিবীতে এসেছি আজ আক্ষরিক অর্থেই তার

সত্যতার প্রমান পেয়েছি বয়সের সাথে বেড়ে উঠা

পরিপক্ক চেহারায় আজ থেকে ২৫ বছর আগে

আমাদের বাবা-মেয়েকে একা করে ছেড়ে যাওয়া

আমার মায়ের চেহারার হুবুহু প্রতিফলন দেখে আমার

বাবা প্রায়শই যখন হারিয়ে যান ২৫ বছর আগেকার

মায়ের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত স্মৃতির জগতে

আর বাবার দুর্বলতার এ দিকটি আমি মেয়ে হিসাবে

বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করাটাই স্বাভাবিক যদিও

আমি এ বিষয়টি নিয়ে দোটানায় ভুগছি প্রতিনিয়ত

কারণ আমি বুঝতে পারছিনা আমার কি করা উচিত?

আমার কি আমার মাঝে মায়ের স্মৃতিকে প্রজ্জলিত

করে করে রাখা উচিত এতে কি বাবা আমার মাঝে

মায়ের রেখে যাওয়া স্মৃতি আগলে থেকে মানসিকভাবে

ভালো থাকবেন? না উল্টো বাবার মনে শুকিয়ে যাওয়া

ক্ষতটি খুচিয়ে খুচিয়ে আরো দগ্ধ করে দেয়া? আর যদি

করি এর উল্টোটা অর্থাৎ আমার আর বাবার মাঝে

একটি অদৃশ্য দেয়াল তৈরী করে বাবার সাথে নৈকট্যের

ফারাক সৃষ্টি করে বাবাকে 'মা বিস্মৃত' করে আমি

আড়ালে থাকি তাতে কি বাবা মায়ের ফেলে যাওয়া

বিশাল স্মৃতির সাগরে না ভেসে ভালো থাকবেন না

আমার অন্তহীন আড়াল বাবার যন্ত্রণাকাতর হৃদয়ে

নিশ্বব্দ কষ্ট বিলাপ করে কাঁদবে সত্যি-ই এ যেন এক

সীমাহীন দ্বন্দ যা আমাকে কিংকর্তব্যবিমূর করে

তুলেছে, যদিও এ বিষয় নিয়ে বাবার সাথে কখনো

কথা হয়নি তথাপিও বাবার মাঝে মায়ের স্মৃতিকে

পুনর্জাগনের উদ্দেশ্যে বাবার কাছ থেকেই কৌশলে

জেনে নিতাম বাবা পছন্দ করেন এমন কি কাজ মা

করতেন বা বাবা খেতে ভালবাসেন এমন কোন

রেসিপিটা মা রান্না করতে ভালবাসতেন এক কথায় মা

কে পরিপূর্ণ নকল করাটাই ছিল আমার উদ্দেশ্য যাতে

করে আমার মাঝে বাবা ফিরে পান মাকে, ফিরে পান

তার অতীতকে পরক্ষনেই আমি ভুল করছি বাবার মনে

মাকে পুনরজ্জীবিত করে বাবাকে কষ্ট দিয়ে এ উপলব্ধি

থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলছি বাবার জগত থেকে

আড়াল করে ফেলছি বাবার চোখ থেকে নিজেকে আর

এটি করতে যেয়ে আড়াল থেকে লক্ষ্য করছি বাবার

মনোভাবের পরিবর্তন, যদিও বাবাকে আমার এ

আচরণের জন্য বিচলিত দেখি বিমর্ষ দেখি তখন

আবার মনে হয় হয়তবা আমার এ উদ্যোগ টা ভুল

বরংচ এখনি কষ্ট দিচ্ছি আমার প্রিয় বাবাকে আমার

মাঝে আমার মাকে লুকিয়ে রেখে তবে এটা বেশ

উপলব্ধি করতে পারি বাবা আমার মাঝে হারিয়ে যান

তার প্রিয় অতীতে সব পরিবেশে সব পরিস্থিতিতে

বাবার চোখে ভেসে উঠত মায়ের প্রতিচ্ছবি যা ছিল

আমার চেহারার প্রতিফলন, একদিন বাবা আমকে

ডেকে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন 'শ্রেয়সী

আমি জানি তুই তোর মাকে প্রতিটি পদক্ষেপে হুবুহু

কপি করে আমাকে তোর মায়ের স্মৃতির মধ্যে বাঁচিয়ে

রাখতে চাইছিস কিন্তু মা তোর চেহারায় তো আমি

তোর মাকে খুঁজে পাই প্রতিটি কাজ প্রতিটি পদক্ষেপ

কেন তোকে তোর মাকে ফলো করতে হবে প্রতিটি

মানুষের-ই একটি নিজস্ব স্বাধীনতা আছে সে চাই সে

তার মত চলুক তোর মায়ের প্রতিটি বিষয় যে তোর-ও

পছন্দের হবে তাতো না তবুও তুই তা অবলীলায় করে

যাচ্ছিস শুধু আমার মাঝে তোর মাকে ফিরিয়ে দেয়ার

জন্য হয়তবা যার সবটাই তোর পছন্দের না তবুও তুই

করছিস’তখন আমি বাবাকে প্রশ্ন করলাম ‘তবে

তোমার কাছ থেকে আমি নিজেকে আড়াল করে

রাখলে তুমি বিমর্ষ হয়ে পড় কেন?’ বাবা হেসে বললেন

'পাগলি মেয়ে, সেতো আমার কাছ থেকে তোকে

আড়াল করছিস বলে, এখনো এতটাই অবুঝ রয়ে

গেলি!’ এরপর বাবার কাছ থেকে মায়ের বিষয়ে যা

কিছু জানতে চাইতাম বাবা যেন তার উল্টোটা বলতো

যেন আমি আমার স্বকীয়তা ফিরে পাই, আজ বাবা

দিবস, বাবার কাছে জানতে চাইলাম মায়ের কাছে

পাহাড় প্রিয় ছিল না সমুদ্র? বাবা বললেন পাহাড়,

কিন্তু আমি জানি বাবা উল্টোটা বলছেন নিশ্চয় মায়ের

কাছে সমুদ্র ছিল প্রিয় তাই ঠিক করলাম বাবা দিবসে

বাবাকে নিয়ে বান্দরবন না গিয়ে কক্সবাজার যাব, আজ

বাবাকে নিয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের

বালুকাবেলায় বসে যখন বাবার চোখে-মুখে সাগরের

জল ছিটিয়ে দিচ্ছি তখন কে বলবে বাবা ২৫ বছর

আগেকার তার প্রিয়তমা স্ত্রী 'রানু'কে নিয়ে না তার

আদরের মেয়ে রানুর অবিকল প্রতিচ্ছবি 'শ্রেয়সী' কে

নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন আগামীর? আর মেয়ে হিসাবে

বাবার জন্য এটুকু করতে পারা বোধকরি আমার

মায়ের প্রতি দায়বদ্ধতার ভার কিছুটা হলেও কমেছে......"
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন

২৪ জানুয়ারী - ২০১১ গল্প/কবিতা: ৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "স্থিতিশীলতা”
কবিতার বিষয় "স্থিতিশীলতা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪